বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত ১৪৩নং নথুল্লাপুর তেরাউতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ নানা সমস্যা ভুগছে। ১৯৮৭ সালে এই বিদ্যায়টি স্থাপিত হয়। জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। বানিয়াচং উপজেলায় এই বিদ্যালয়টি অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সব চাইতে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
ভবন না থাকায় জীর্ণদশা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এটি। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা। জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে তালা দেয়া থাকায় সেটিও ব্যবহার করতে পারছেনা ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব কাজ করতে তাদের যেতে হয় আশেপাশে অন্যদের টয়লেটে।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে বিরুদ্ধে স্লিপের টাকা আত্নসাত, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো না আসা, নিজের মন মতো কমিটি, ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।
রবিবার (১0 সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে নথুল্লাপুর তেরাউতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের ক্লাসে উপস্থিতির হার একদম কম। পুরাতন ভবনে ছাদ ভেঙ্গে রড বের হয়ে গেছে।
শ্রেণী কক্ষের মেঝে ধেবে গেছে। এসব ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। অফিস কক্ষসহ ৩টি কক্ষের মাঝে শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়টিতে নেই টিউবওয়েল, টয়লেট, নেই শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আসবাব হাই ও লো বেঞ্চ। পড়ালেখা করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতায় ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। চালু নেই মিড-ডে মিল।
বিদ্যালয়ের ভুমি দাতার সন্তান সুমন চন্দ্র দাস জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্ধ রয়েছে। এলাকাবাসীর সাথে প্রধান শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দূরত্বসহ নানা সমস্যার কারনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা বিস্তারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপর প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য টয়লেটটি তালা দিয়ে রাখেন।
বিগত ৬ বছরে কোন উন্নয়ন হয়নি বিদ্যালয়ের। প্রধান শিক্ষক তার নিজের লোক দিয়ে পরিচালনা কমিটি করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের কে সভাপতি আমরা আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি এমনকি তাকে দেখিও নি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ দেবনাথের কথা হলে তিনি জানান, আমি বিগত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে যোগদান করি। ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শর উপরে। শিক্ষক রয়েছেন ৫জন। বর্তমানে এই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ভবন বলে জানিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। নতুন ভবনের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।
ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা থেকে ভবনের পাশে একটি টিনশেড দিয়ে ঘর বানিয়েছি। পাশাপাশি স্লিপের টাকায় টেবিল,ফ্যানসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয় করেছি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দিলীপ দেবনাথ জানান,আমি সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করি। ঝুঁকিপুর্ণ ভবন থাকায় বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ আমি বাসায় নিয়ে যাই। উপবৃত্তির কাজ হলে সাথে করে নিয়ে আসি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে ৯নং পুকড়া ইউনিয়নের সাতগ্রাম একটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র দাসকে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী যেসব অভিযোগ এনেছেন সেগুলো মিথ্যা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কবিরুল ইসলাম জানান, এসব সম্পর্কে কেউ তো আমাকে কোন কিছু বলেনি। ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি অবগত না। ওই ভবনটি পরিত্যাক্তও কিনা সেটাও আমি বলতে পারব না।
প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে যদি অভিযোগ থেকে থাকে নিশ্চয়ই ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব। আর অচিরেই ওই বিদ্যালয়টি ভিজিট করতে যাব।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply