হাওর এলাকার অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন আঞ্চলিক মহাসড়ক সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরীগঞ্জ-হবিগঞ্জ রুটের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার রাস্তার কাজ বাস্তবায়নের পথে।
গত বৃহস্পতিবার (৭সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে আজমিরীগঞ্জ অংশের পিরিজপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ দেখতে গেলে কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তোলে ধরেন ঠিকাদারের নিযুক্ত ও কাজের দেখভালোর দায়িত্বে থাকা তৌহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।
আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পুরণ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। এরই মধ্যে তিনি কয়েকবার আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ পরিদর্শন করেছেন। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প।
হবিগঞ্জ ও তাহিরপুরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এই সড়কটি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা কমিশন ও সড়ক পরিবহন উইংয়ের সুনামগঞ্জ- মদনপুর- দিরাই- শাল্লা-জলসুখা- আজমিরীগঞ্জ- হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা- জলসুখা সড়কাংশে নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার রাস্তাটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ার রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে যা বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।
এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল, সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরীগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা অংশে ১৫.৮৩ কিমি সড়কাংশ নির্মাণের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
ওই সড়কের মদনপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে দিরাই পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক জেলা সড়ক উন্নয়ন (সিলেট জোন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হয়েছে। দিরাই থেকে শাল্লা পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য মদনপুর-দিরাই-শাল্লা (দিরাই-শাল্লা অংশ) সড়ক নির্মাণ নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। শাল্লা থেকে জলসুখা (আজমিরীগঞ্জ) পর্যন্ত ১৫.৮০ কিলোমিটার সড়কাংশ বিবেচ্য প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন রয়েছে। আজমিরীগঞ্জ (জলসুখা) থেকে বানিয়াচং পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়কাংশ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়ক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাজ চলমান ।
বানিয়াচং থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কাংশ জেলা উন্নয়ন (সিলেট জোন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হয়েছে। বিবেচ্য প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে সুনামগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ ও হবিগঞ্জের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। প্রকল্প এলাকাটি কৃষি ও মৎস্য শিল্প প্রধান হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সামগ্রী দ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা সম্ভব হবে। হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের বাস্তবায়নে মহাসড়কের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড ও মেসার্স জন্মভূমি নির্মাতা জেভি কন্সট্রাকশন।
৭৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার হবিগঞ্জ অংশে এবং বাকি ১০ কিলোমিটার সুনামগঞ্জ। পুরো সড়কে রয়েছে ১০টি ব্রিজ। হবিগঞ্জ অংশের কালনী নদীর উপর সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম ৮৮৮ মিটার ও কুশিয়ারার শাখা কোদালিয়া নদীর উপর ৪৪৪ মিটারের দুটি বড় ব্রিজ রয়েছে। বাকি আটটি ব্রিজ সুনামগঞ্জ অংশে।
শাল্লা-জলসুখা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের (হবিগঞ্জ অংশ) ব্যবস্থাপক শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। তবে হাওর এলাকায় বছরে ৪-৫ মাসের বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করছি এই মেয়াদের মধ্যেই কাজ সমাপ্ত করতে পারবো।
এই বিষয়ে হবিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ও বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন, উন্নয়নের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে দেশের সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। চলমান রয়েছে মহাসড়ক উন্নয়নসহ বেশকিছু মেগাপ্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দরকার একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সরকার সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই বিগত একযুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তৈরি করেছে নতুন এক মাইলফলক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জসহ পুরো বাংলাদেশ।
এই আঞ্চলিক সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষে হলে সুনামগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ ও হবিগঞ্জেরে মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। প্রকল্প এলাকাটি কৃষি ও মৎস্য শিল্প প্রধান হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সামগ্রী দ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা সম্ভব হবে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply