বানিয়াচঙ্গের প্রবীণ ধর্মীয় শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেতা মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আমীর থেকে পরিপূর্ণ আমীর হয়েছেন। শনিবার (২সেপ্টেম্বর) তাঁর আমীর হওয়ার খবর জানান দলটির আরেক নেতা মাওলানা রিয়াদ আল আসাদ।
গত ৭ এপ্রিল দলটির আমীর মাওলানা যুবায়ের আহমদের মৃত্যুতে পদ শূন্য হলে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সভায় মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদকে ভারপ্রাপ্ত আমীর নিযুক্ত করা হয়েছিল। এরপূর্বে তিনি সিনিয়র নায়েবে আমীরের দায়িত্বে ছিলেন।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় এক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে তাঁকে বানিয়াচং ঢুকতে না দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করে দেশ-বিদেশ আলোচিত হওয়া মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ খেলাফত মজলিসের আমীর হওয়ায় ফেসবুকে অনেকেই তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ১৯৫৪ সালে ২১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরে আদমখানী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জম্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আব্দুল মজিদ (রহ.) স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন।
এলাকার সর্দার (সামাজিক বিচারক) এবং রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন। মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ চট্টগ্রাম জামিয়া আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওয়ারে হাদীস সম্পন্ন করেন।
এছাড়া ১৯৭৪ সালে সন্দ্বীপ বশিরিয়া সরকারি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সমাপ্ত করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এফ এম (মাস্টার্স অব ফিকাহ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
১৯৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম শহরে ধামপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। ১৯৭৭ সালে নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিত্ব ও মুরব্বিয়ানদের বিশেষ অনুরোধে বানিয়াচং চলে আসেন। ওইসময় তিনি স্থানীয় জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৭ সালে বানিয়াচঙ্গের ঐতিহাসিক এড়ালিয়া মাঠের পাশে জামিয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া আদমখানী কালিকাপাড়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। অদ্যাবধি তিনি ওই মাদ্রাসার মোহতামিম (প্রধান শিক্ষক) এর দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৭ সালে হবিগঞ্জ সদরে দীঘলবাগ জামিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসারও মোহতামিম এর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৮৭ সালে বানিয়াচং আল মদীনা শিশু একাডেমী এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং অদ্যাবধি এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৩ সালে দারুল ইহছান মহিলা মাদ্রাসা আদমখানী বানিয়াচং-এর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন।
ছাত্র জীবন থেকে তিনি ইসলামী ছাত্র রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দেশে যখন সংগঠন করা নিষিদ্ধ ছিল তখন তিনি আর জাফর উল্লাহ খান (রহ.) কোরআন প্রচার সংস্থা নামে অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮২ সালে মোহাম্মদ উল্লাহ হাফিজ্বী হুজুর (রহ.) তওবার রাজনীতির ডাক দিলে তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন।
১৯৮২ সালে খলিফায়ে মাদানী শায়খ আব্দুর রহমান শায়খে ধলিয়া রহ. এমপি নিবাচন করেন। এসময় তিনি নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করেন। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত খেলাফত মজলিস হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর তিনি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নায়েবে আমীর ও ২০২৩ থেকে সিনিয়র নায়েবে আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল আমীরে মজলিস শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী (রহ.) এর ইন্তেকালে আমীরের পদ শূন্য হওয়ায় ৭ এপ্রিল ২০২৩ থেকে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।
এবার ভারমুক্ত হয়ে তিনি সরাসরি দলটির আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে বানিয়াচঙ্গের কোনো ব্যক্তি এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান হলেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply