২০১৫ সালে নিজের রক্তদানের মাধ্যমে মানবিক এই কাজ শুরু করেছিলেন এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং উপজেলার ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের কুতুবখানী মহল্লার মৃত কামাল হোসাইন খান এর ছোট পুত্র হাদিউজ্জামান খান হাদি।
নিজে কষ্ট করে মুমূর্ষূ রোগীদের জন্য রক্ত ব্যবস্থা করাই যেন একমাত্র নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। দিন-রাত ২৪ঘন্টার মধ্যে কারো রক্তের দরকার হলেই হুট করে ছুটে যান তাদের কাছে। নিজে না পারলেও অন্যদের কাছ থেকে যে কোন গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করে দিচ্ছেন রোগীদের।
এ যেন রক্তের বাঁধনে বাঁধা তারই জীবন। এই পর্যন্ত নিজে ২৭ বার বিভিন্ন রোগীদের রক্ত প্রদান করেছেন এবং প্রায় ৬ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমান সমাজে যেখানে পানি বোতল কিনতে গেলেও টাকার প্রয়োজন হয় সেখানে হাদি বিনামূুুুুুুুুুুল্যে এই লাল ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছেন।
কারো রক্ত প্রয়োজন হলে, এমন কথা শুনলে সে অস্থির হয়ে যায় রক্ত যোগাড় করে দিতে। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট হাদি। ছোট বেলা থেকেই সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসতেন। সে পরিবারের খুব পরিশ্রমী ছেলে। বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন মিষ্টভাষী ও ভদ্র এই হাদি। নিজ এলাকার পাশাপাশি শহরেও তাকে সবাই খুব পছন্দ করে।
অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না। হাদি বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। রক্ত দান ও সংগ্রহ করে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরষ্কার।
হাদিউজ্জামান হাদির সাথে কথা হলে তিনি বানিয়াচং মিররকে জানান, মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন অন্য কারো শরণাপন্ন হয়। বিশেষ করে যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন মানুষ দিশেহারা হয়ে ওঠে। কোথায় পাবে, কীভাবে পাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্ত পাওয়া যাবে? সেই চিন্তা যেন তখন আকাশ সমান হয়ে দাঁড়ায়।
এরই মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন, যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। রক্তের পোস্ট বা মেসেজ পেলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করি রক্ত জোগাড় করে দিতে।
যখন রক্ত জোগাড় করে দিই তখন রক্ত গ্রহীতা ও তার আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ দেখতে পাই। তখনকার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। রক্ত জোগাড় করে দিলে মনে প্রশান্তি কাজ করে। কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই ভাবেন, রক্ত দিলে অসুস্থ হয়ে যাবেন বা দুর্বল হয়ে পড়বেন। বাস্তব সত্য এর উল্টো। রক্তদান- হৃদরোগ, ক্যান্সার বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোসহ ১৭টিরও বেশি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
রক্তদানের সাথে সাথে দেহের বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। ফলে সুস্থতা, প্রানবন্ততা আর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই আসুন রক্ত দেই জীবন বাঁচাই।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply