দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারীকরণ) দাবিতে বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অধিকার আদায়ে লাগাতার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন বানিয়াচং উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসেও তারা ক্লাসে ফিরে যাচ্ছেন না।
তাদের এই আন্দোলনের ফলে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বানিয়াচংয়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো ধরণের ছুটি না নিয়ে চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনেক শিক্ষক আন্দোলনের স্থল থেকে লাইভের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের দাবি-দাওয়া তোলে ধরছেন।
বিদ্যালয়ে তাদের এই অনুপস্থিতি আর ক্লাস না করানো ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত, নানা সমস্যার সম্মুখীনসহ বিনষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
গত সোমবার (৩১জুলাই) উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়, ক্লাস করতে এসেছেন অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু এসে তারা খেলাধুলা ও হৈহুল্লোড় করে সময় কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস নেয়া হচ্ছেনা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বানিয়াচং উপজেলা শাখার সভাপতি ও সন্দলপুর ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আকবর চৌধুরী জানান, সবকিছুই দেখতে হয়। আন্দোলনেও সময় দিতে হয় আবার ক্লাসও করাতে হয়। তবে যারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তারা ছুটি নিয়েই সেখানে গিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারাই পরিপ্রেক্ষিতে লাগাতার আন্দোলনে সামিল হয়েছে উপজেলার কিছু সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী। তবে আমরা যথাযথ উদ্যোগ নিতে না পারলেও সমর্থন করি এ আন্দোলনকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনে যোগ দেয়া শিক্ষকেরা বলছেন, প্রথমে কিছুসংখ্যক শিক্ষক এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে উপজেলার এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে এ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন অনেকেই। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এদিকে অভিভাবকেরা জানান, শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সকল প্রকার মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে।
সব মিলিয়ে তিন মাস সময় রয়েছে, তন্মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষার দেওয়া সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং ভালো ফলাফল অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়াও শিক্ষা ব্যবস্থায় এবার নতুন পাঠ্যক্রম সংযোজন করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তারা আরও বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঠিকই যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষকরা শ্রেণির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রম দুটোই বিফলে যাচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে যোগদান দিতে না পারলেও একত্বতা প্রকাশ করেছেন, পাশাপাশি কর্ম বিরতি পালন করছেন এবং আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সামছুল হক জানান, সরকারি ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রবিবার (২৩ জুলাই) থেকে যথাযথ নিয়মানুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবগত করবো।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বঞ্চিত করে শিক্ষকদের আন্দোলনে যোগদানের কোনো সুযোগ নেই। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও সরকারের আওতাধীন। সুতরাং সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন না মেনে ক্লাস স্থগিত বা বন্ধ করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply