দেখে মনে হতে পারে ভালো ফলন হওয়া ফসলের (কচুক্ষেত ) একটি মাঠ। আসলে এটি একটি নদী। পুরাতন খোয়াই নদী। একসময় খোয়াই নদী শহরের ঠিক মাঝখানে দিয়ে প্রবাহিত হত। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলে বান- বন্যা দেখা দিত। বাসা বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি চলে আসতো।
যেজন্য ১৯৭৬-৭৭ এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে দুই দফা (মাছুলিয়া থেকে রামপুর এবং রামপুর থেকে মাছ বাজার) ৫ কিলোমিটার লুপ কাটিং করে খোয়াই নদীকে তৎকালীন সময় শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত করে দেওয়া হয়। জানা যায় লুপ কাটিংয়ের আগে নদীটির প্রশস্ততা ছিল ২৫০ থেকে ৩৫০ ফুট এবং গভীরতা ছিল ২৫ থেকে ৪০ ফুট।
শহরের ভিতরে থেকে যাওয়া অংশটির নাম হয় পুরাতন খোয়াই নদী। অরক্ষিত জলাভূমির ক্ষেত্রে যা হবার তাই হয়েছে পুরাতন খোয়াই নদীর সঙ্গে। সরকারি – বেসরকারি স্থাপনা হয়েছে, নদী পাড়ের বাসা বাড়ি উঠে এসেছে নদীর বুকে। স্থানে স্থানে দখল দূষণ হয়েছে! যেটুকু অংশ রয়েছে সেটুকুও চরম অযত্ন অবহেলার শিকার হচ্ছে নিত্য দিন।
অথচ এই নদীটি এই শহরের জন্য বড় রকমের সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারত। খোয়াই নদীকে কেন্দ্র করে যে সভ্যতা, যে গঞ্জ গড়ে উঠেছে হবিগঞ্জ নামে সেই শহরটি হতে পারে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি শহর।
হবিগঞ্জ শহরকে স্বাস্থ্যকর সুন্দর নগরে পরিচিত করতে পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষার বিকল্প নেই। কারণ এই শহরের বারিপাত অঞ্চল বা বৃষ্টির পানির প্রধান আঁধার হচ্ছে পুরাতন খোয়াই নদী। পরিবেশবাদী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজ নদীটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে প্রায় দেড় যুগ ধরে।
হবিগঞ্জ শহরের যোগাযোগ ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত হতে পারে পুরাতন খোয়াই নদীকে ঘিরে। বিশ্বের বহু শহরে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা। সেরকম ভাবে হবিগঞ্জ শহরেও করা যেতে পারে পুরাতন খোয়াই নদীকে কেন্দ্র করে।
পরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীর দুই পাড় সবুজায়ন ও চলাচলের রাস্তা রেখে নদী কেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সৌন্দর্য , স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জলাবদ্ধতামুক্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সবকিছুরই উন্নতি হবে। এই শহরটি হয়ে উঠবে দেশের অনন্য নান্দনিক একটি সুন্দর শহরে।
লেখক
পরিবেশকর্মী,হবিগঞ্জ ।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply