হবিগঞ্জের শিল্প ও পণ্য মেলায় দৈনিক পুরস্কার বিতরণ ড্র এর নামে অবৈধ ভাবে লটারি জুয়া খেলা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। হাউজি খেলা পরিচালনাকারী একটি চক্র এসবের নেপথ্যে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে একাধিক ভুয়া টিভি নামধারী ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে লটারির ড্র অনলাইনে দেখিয়ে পুরো জেলা থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। একদিনেই ৬০ লক্ষ টাকার টিকেট বিক্রি করার একটি তথ্যও পাওয়া যায়।
জেলার সব কয়টি উপজেলায় শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা যোগে লটারি পরিচালনাকারীদের পক্ষ থেকে টিকেট বিক্রি করা হয়। ২১ মে থেকে হবিগঞ্জ নিউ ফিল্ড মাঠে অনুষ্ঠিত ওই মেলায় জেলা প্রশাসন ও আয়োজক জাতীয় মহিলা সংস্থা, হবিগঞ্জের নাম ব্যবহার করে লটারি বিক্রি করা হয়ে আসছে।
তবে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার ইসরাত জাহান দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকাকে জানান, লটারির টিকেট বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়নি, বরং তিনি আরো জানান লটারি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের জাতীয় মহিলা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, লটারি টিকেট বিক্রি করার ব্যাপারে তাদের জানা নেই। তবে গত কয়েক দিন ধরে প্রকাশ্যেই অনুমতি বিহীন এ লটারি কার্যক্রম চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অত্যন্ত সুকৌশলে মেলায় প্রবেশ টিকেটের মতো করে টিকেট তৈরি করা হয়েছে। টিকেটের কোথাও লটারি শব্দটি লেখা নেই। আয়োজকরা কখনো বলছেন এটি আসলে মেলায় প্রবেশের টিকেট। আবার টিকেট বিক্রি কারীরা কখনো জানাচ্ছেন মেলায় প্রবেশ করতে হলে আলাদা করে গেইটে টিকিট কিনতে হয়।
সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে মেলায় প্রবেশ করার টিকেট গেইটে বিক্রি করার কথা কিন্তু টিকেট বিক্রিকারীরা মেলা থেকে ৩০/৪০ কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করছেন কিভাবে!
সরেজমিনে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ কেউ ২০ টি, ২৫ টি, ১০০ টি করে টিকেট কিনছেন প্রতিদিন। জুয়ার নেশার মত পুরস্কারের নেশায় দৈনিক ইনকামের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করে টিকেট কিনছেন তারা। অনেক পরিবারেই এ নিয়ে চলছে কলহ।
লটারি বিক্রির পোস্টারে ইয়ামাহা কোম্পানির ৫ লাখ টাকা দামের আর ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেল, ষাড় গরু সহ বিভিন্ন দামি পুরস্কারের ছবি থাকলেও এসব পুরস্কার কখনোই দেয়া হয়নি বলে জানা যায়। প্রথমদিকে অত্যন্ত কম দামি মোটরসাইকেল ও পুরস্কার দেয়া হলেও টাকা সংগ্রহের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা মানসম্পন্ন মোটরসাইকেল দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লটারি বিক্রির ম্যানেজার হিসেবে নবীগঞ্জ উপজেলায় আল আমিন, শায়েস্তাগঞ্জে সুমন ও আলমগীর, লাখাইয়ে ছামাদ ও বারেক, বাহুবলে জালাল ও মনির এবং হবিগঞ্জ সদরে হক সাহেব নামে এক ব্যাক্তি কাজ করেন। তথ্য পাওয়া যায় পন্ডিত নামের এক ব্যক্তি এদের নেতৃত্বে রয়েছেন।
লটারি অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত আলমগীর নামের এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আইকন কলারে তার একটি মোবাইল নাম্বারে কল দেয়া হলে সেখানে দেখতে পাওয়া যায় তার নাম ‘আলমগীর হাওজি’।
টিকিট বিক্রির সাথে জড়িত এক ব্যাক্তি দাবি করেন, হবিগঞ্জের শিশু পার্কের জন্য আয়োজন। সব দিক ম্যানেজ করেই এর টিকেট বিক্রি চলছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অবৈধ টিকেট বিক্রির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ দাবি করছেন লটারি আয়োজনের নামে জুয়া খেলা বন্ধ হোক এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply