আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে একের পর এক নতুন কমিটি গঠন করছে দলটি। তাই হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগকেও শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত করতে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতার সন্ধানে জেলার নীতি নির্ধারকেরা।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৩জুন) মাধবপুর উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এড. ফয়জুল বশির চৌধুরী সুজন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল স্বাক্ষরিত এবং কেন্দ্রীয় জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদককৎ1 এডভোকেট ইকবাল হোসেন ও কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুল আলম বুলবুলের সুপারিশে কমিটিদ্বয় ঘোষণা করা হয়।
সুজন রায়কে আহ্বায়ক এবং আনু মোহাম্মদ সুমন, শাহ মোহাম্মদ জয়নাল, হৃদয় পাঠান উজ্জল, শাহাদাৎ হোসেন দুলালকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাইফুল ইসলাম শিপন, মঈন উদ্দিন উজ্জল, মিন্টু চন্দ্র পাল, মোঃ খাইরুল ইসলাম খাঁন, মোঃ ইমরান পাঠান বাদশা, মোঃ সুজন মিয়াকে সদস্য করে মাধবপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মোঃ জামাল উদ্দিনকে আহবায়ক, মোঃ মোহন মিয়া ও মোঃ বশির আহমেদ সুমনকে যুগ্ম আহবায়ক করে এবং সুরঞ্জিত সোহেল, সঞ্জয় রায়, ফরহাদ হোসেন, স্বপন রায়, সাইদুল ইসলাম হাওলাদার, মোঃ শরিফ মিয়া, পলাশ ভট্রাচার্য, মোঃ জুয়েল মিয়াকে সদস্যকে করে মাধ্বপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি করা হয়েছে ।তবে সদ্য গঠিত মাধবপুর উপজেলা এবং পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।
ইতোমধ্যে ওই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পদবঞ্চিতরা। তারা বলছেন, কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে চুরি-ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পদবঞ্চিত নেতা দৈনিক আমার হবিগঞ্জ’কে জানান, সদ্য গঠিত মাধবপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হৃদয় পাঠান উজ্জল আন্তঃ জেলা গাড়ী চোর চক্রের সদস্য। তার বিরুদ্ধে গাড়ী চুরি, শিবির সম্পৃক্ততা ও মাদকাসক্তির অভিযোগও করেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগে চোরাই গাড়ীসহ দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন হৃদয় পাঠান উজ্জল।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট ফয়জুল বশির চৌধুরী সুজন বলেন , ‘ নবগঠিত মাধবপুর উপজেলা কমিটি এবং মাধবপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি মূলত একটা অস্থায়ী ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’। কমিটি বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই’।?
হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘মূলতঃ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশেই কমিটি গঠন করা হয়েছে’।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইকবাল হোসেন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাধবপুর উপজেলা কমিটি এবং মাধবপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রেরিত কমিটিতে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এডভোকেট ফয়জুল বশির চৌধুরী সুজন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেলের অনুরোধে আমি ও কেন্দ্রীয় সদস্য বুলবুল আহমেদ সুপারিশ করে দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে উক্ত কমিটির কাউকে আমরা চিনি না’।
কমিটি বাণিজ্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন’।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় বছর খানেক আগে কয়েকজন সহযোগী ও আটটি চোরাই গাড়িসহ মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য গঠিত মাধবপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হৃদয় পাঠান ওরফে উজ্জ্বল পাঠানকে (৩১) গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
স্থানীয় পদবঞ্চিত আরেক নেতা বলেন, ‘আমরা এই বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি মানি না। যাদের ত্যাগ, শ্রম ও রক্তের বিনিময়ে মাদক ও শিবিরমুক্ত হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে সাবেক শিবির নেতা, গাড়ী চোর, মাদকাসক্ত ও ইভটিজারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধবপুর শ্রমিক লীগের এক নেতা বলেন, উপজেলা কমিটির আহবায়ক সুজন রায় পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এক ব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারবেন না।
তাঁর নির্দেশনা অমান্য করে কমিটিতে সুজন রায়কে আহবায়ক রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মোঃ ইমরান পাঠান বাদশা কিছুদিন আগে নারী নির্যাতন মামলায় জেল খেটে বর্তমানে জামিনে আছেন।
তাকে কিভাবে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। এতে করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে কিনা তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভালো বলতে পারবেন’।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সানী তার ফেসবুক আইডিতে উক্ত কমিটিদ্বয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক একটি পোস্ট করেন।
উক্ত পোস্টে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মাসুম আজাদ মন্তব্য করেন, ‘চাচা আমি ঢাকাত, কিছু তো শুনলাম না। ১০ লাখ টাকা অনেক তাই না।
তবে মাধবপুরের এরা ভালো ভালো ব্যবসা করতাছে আর নিজেরাও খাইতাছে এরা টাকা উটাইতে পারব কোন বিষয় না। তারার জন্য শুভকামনা রইল’।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি সেখ সেবুল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কমিটির স¤পর্কে আমরা অবগত নই। ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা কমিটির ডকুমেন্ট দেখেছি’।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদেকুর রহমান বলেন, ‘কোনও রকম মিটিং বা সম্মেলন ছাড়া এই কমিটি করা হয়েছে’। কমিটি বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে আমিও এমন অভিযোগ শুনেছি’।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply