বানিয়াচংয়ে স্কুল ছাত্রী শেখ ফারিহা তাসনিম তুবা’র নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা অবশেষে জট খুলতে শুরু করেছে। কার্যত সে নিখোঁজ হয়নি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয়ের জেরে কলেজ ছাত্রের সাথে দেখা করার জন্য অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল তুবা।
অবশেষে দীর্ঘ নিখোঁজ নাটকের অবসান ঘটিয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশের দক্ষতায় গত বুধবার (৬জুন) রাত ৯টার দিকে তুবাকে কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে।
নিখোঁজের ঘটনাটি বানিয়াচংয়ে গত কিছুদিন যাবত টক অব দ্যা বানিয়াচংয়ে পরিণত হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক শুভাকাঙ্খি, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি তুবা নিখোঁজ হয়েছে মর্মে তার সন্ধান চেয়ে পোস্ট করেছিলেন।
সুত্র জানায়, স্কুল ছাত্রী তুবার তার বড়ো বোনের চাকরির সুবাদে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক কলেজ ছাত্রের সাথে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মোবাইলের কথাবার্তা অবশেষে সম্পর্কে পরিণত হয় তুবার। তারা দুুইজনের মধ্যে আড়ালে-আবডালে চলে মন দেয়া-নেয়ার কাজ। এর ফলে দুইজনের সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে তথাকথিত কলেজ ছাত্র প্রেমিক তুবাকে একটি মোবাইল ফোন উপহার দেয়।
এই মোবাইলের মাধ্যমে দিনরাত চলে তাদের মধ্যে কথোপকথন। এরই ফাঁকে ওই কলেজ ছাত্রের সাথে দেখা করতে মরিয়া হয়ে উঠে তুবা। একপর্যায়ে গত ৪ জুন (রবিবার) স্কুলের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কলেজ ছাত্র প্রেমিকের কথা মতো দেখা করতে প্রথমে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা যায় স্কুল ছাত্রী তুবা।
সেখানে যাওয়ার পর দেখা হয়নি তার প্রেমিকের সাথে। পরবর্তীতে কথা অনুযায়ী প্রেমিক কক্সবাজারে অবস্থান করছে বলে তুবাকে জানায়। তার কথা বিশ্বাস করে ছুটে যায় কক্সবাজার। সেখানে গিয়েও প্রেমিকের সন্ধান না পেয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেয় তুবা। এরই মধ্যে কক্সবাজারে থাকা কুমিল্লার এক মহিলার সাথে পরিচয় হয় তার। এই সুবাদে মহিলা তুবাকে কুমিল্লায় নিয়ে আসে।
এই দিকে তুবা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
সাধারণ ডায়েরি পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল ছাত্রী তুবাকে উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে উঠে বানিয়াচং থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় তুবা কুমিল্লাতে অবস্থান করছে।
পরের দিন তুবার মা, এক বোন ও এক প্রতিবেশী ভাইকে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে তুবাকে আনতে কুমিল্লায় রওয়ানা দেয় বানিয়াচং থানা পুলিশের চৌকশ একটি দল। সেখানকার থানা পুলিশের সহায়তায় নানা রকম আইনি জটিলতা শেষ করে অবশেষে নিখোঁজ হওয়া নাটকের কুশিলব তুবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে বানিয়াচং থানা পুলিশ।
তবে এই বিষয়ে তুবার পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেয়নি। তথ্য দিতে অনিহা জানিয়েছে তার পরিবার। বানিয়াচং থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও উদ্ধারের বিষয়ে কোনো আপডেট জানানো হয়নি। তুবার পরিবারও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
বিস্তারিত জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে’র সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক আমার হবিগঞ্জকে জানান, নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিল তুবা। আসলে নিখোঁজ হয়নি। প্রেমের সম্পর্ক সুত্র ধরে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল। সে প্রথমে ঢাকা, পরে কক্সবাজার গিয়েছিল।
আমরা সফল অভিযান শেষে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করেছি। এখন সে তার বাড়িতে আছে। তবে মূল রহস্য উদঘাটন করতে এখনো কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন (রবিবার) স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী উপজেলা সদরের ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের সৈদ্যরটুলা মহল্লার মোশাহিদ মিয়ার কন্যা শেখ ফারিহা তাসনিম তুবা।
ওইদিন তুবা বাড়িতে না আসায় অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে অবশেষে পরিবারের পক্ষ থেকে বানিয়াচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) ও বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ অজয় চন্দ্র দেবের চৌকশ নেতৃত্বে বানিয়াচং থানা পুলিশের একটি দল গত বুধবার ( ৬জুন) রাত ৯টার দিকে রুদ্ধশ^াস অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা থেকে তুবাকে উদ্ধার করেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply