হবিগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর এই সময়ে বাজারে বিক্রি হয় তালশাঁস। খেতে সুস্বাদু এই মৌসুমী ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে দেশের বিভিন্ন জেলায় তালের চাহিদা বেশি না থাকায় তাল ছোট থাকতেই শাঁস বিক্রির আশায় এগুলো হবিগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।
তালশাঁসের চাহিদা প্রচুর থাকায় প্রত্যেক ব্যবসায়ি তা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। এ বছরও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনসহ শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস।
প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তালশাঁস ব্যবসায়ী রিচি গ্রামের বিংরাজ মিয়া বলেন, আমি ১০/১৫ বছর ধরে তালশাঁসের ব্যবসা করে আসছি।
হবিগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় আমরা কয়েকজন এ ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছি। এবছর গরম বেশি পড়ায় তালশাঁসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা খুব ভালো হচ্ছে। হবিগঞ্জ মোহনপুর গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া বলেন, আমরা আসামপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর তালের বাগান কিনে থাকি।
এবছর চাহিদা বাড়ায় বগুড়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও হবিগঞ্জে তাল আসছে বলে জানিয়েছেন আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বাগানে প্রায় এক/দেড়শ তালগাছ থাকে। এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে বাগান চুক্তিভত্তিক কিনে তা থেকে তাল ছোট থাকতেই আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুসারে বিক্রি করে থাকি।
তিনি বলেন, প্রতি পিস তাল ২৫ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়াও প্রতিটি তালশাঁস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তাল থেকে কমপেক্ষ ৩টি শ্বাস হয়। এছাড়াও কেউ যদি বেশি পরিমানে তাল বা তালশাঁস কিনেন, তাহলে কিছুটা কম টাকা নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (৬জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ কলাপাতা রেস্তোরার পাশে কয়েকজন তাল ব্যবসায়ীকে তালশাঁস দেখা যায়। তারা জানান, পর্যাপ্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে প্রচুর। প্রতিদিন তাল বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ৬ থেকে ৭শ টাকা জনপ্রতি টিকে বলে জানান তারা।
তালের আঁশ কিনতে আসা ক্রেতা বানিয়াচং উপজেলা সদরের মীর মহল্লা সৈয়দবাড়ীর সন্তান কবি সৈয়দ মিজান উদ্দিন পলাশ বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে এটা পাওয়া যায়। খেতে অনেক সুস্বাদু ও ভাল লাগে। প্রতি পিস তাল থেকে ২-৪ টি আশ পাওয়া যাচ্ছে। বড় প্রতি পিস তাল ২৫ টাকা দরে কিনেছি।
দাম কিছুটা কম হলে আরও বেশি পরিমানে নেওয়া যেতো। ওই স্থানে তালশাঁসের জন্য ভিড় করা কয়েকজন এনজিও কর্মী বলেন, তালশাঁস আমার ও পরিবারের সকলের খুব পছন্দের। প্রত্যেক তালের আটি গত বছর ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল; কিন্তু এ বছর ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তালশাসেঁর উপকারিতার ব্যাপারে চিকিৎসকরা বলেন, এটি অনেক ভাল একটি জনপ্রিয় ফল।
তালের শ্বাঁসেই রয়েছে এমন কিছু পুষ্টিগুণ যা শরীরে খুবই উপকারী। তালশাঁসে শরীরের পানি শুন্যতা দূর করতে সহায়তা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে, হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও তালশাঁসে রয়েছে ভিটিামিন এ, সি ও বি কমপ্লেক্স যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সহায়তা করে ও শরীরের বিশেষ উপকারী। এতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। সর্বোপরি ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও দীপ্তময় করে তুলতে নিয়ম করে তালশাঁস খাওয়া খুবই উপকারী।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply