বিগত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বানিয়াচং সদরের ৩টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর (ওএমএস) ডিলার হিসেবে যারা দায়িত্বে ছিলেন কার্যত অন্তরালে চলে যাওয়ার পর মুখ থুবড়ে পরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাউল বিতরণ। পরে তাদের অনুপস্থিতিতে বাতিল করা হয় ডিলারশীপ।
বিগত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৩ মাসের জন্য সাময়িকভাবে উপজেলা সদরের ৩টি ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ৫টি শর্তসাপেক্ষে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো: সাইফুল আলম সিদ্দিকী ৪ জনকে ডিলারশীপ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
তারা হলেন- বানিয়াচং ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নে ডিলারশীপ পেয়েছে মেসার্স রৌজা এন্টারপ্রাইজ। এই ইউনিয়নে কার্যধারীর সংখ্যা ৪১১জন। ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নে ডিলারশীপ পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নতুনবাজার বিএল ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মহিবুর রহমান বাবলু। এই ইউনিয়নে কার্ডধারীর সংখ্যা ৫২০ জন।
অন্যদিকে ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়নে দুইজনকে ডিলারশীপ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, মেসার্স প্রান্ত এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ফারুক মিয়াকে। তার আওতাধীন কার্ডধারীর সংখ্যা ৫২১ জন। অপরজন হলেন নওরীন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন। তার আওতাধীন কার্ডধারীর সংখ্যা ৪৫০ জন।
এদিকে এসব নেতারা ডিলারশীপ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় উপজেলাজুড়ে এমনকি বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এটা নিয়ে উপজেলা যুবদলের এক নেতা তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন-সংগঠন সামলাবেন না ১০টাকা কেজি চাউলের ডিলার সামলাবেন ? আদতে সংগঠনের তো ১২টা বাজিয়ে দিয়েছেন পূর্বেই। উপজেলা ছাত্রদলের এক নেতা পোস্ট করেছেন-বিএনপির বড় নেতাকে দিয়ে ফোন দেওয়াইয়া ৩ নং ইউনিয়নের চালের ডিলার নিয়ে যে নষ্টামিটা করছেন ভবিষ্যৎ ভালো হবেনা বলে দিলাম আধা বিএনপি নেতা।
অন্যদিকে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ডিলার নিয়োগ নিয়ে তিনিও তার আইডিতে পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন-খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) ডিলার নিয়োগে খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ম বা শর্ত মেনে অনেকেই আবেদন করেছেন। যারা ডিলারশীপ পেয়েছেন তাদের তো কোন দোষ আছে বলে আমি মনে করি না।
ডিলারশীপ তাদের কোম্পানির নামে নিতে যা যা করনীয় করেছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কমিটি কিভাবে আবেদন যাচাই-বাছাই করেছেন তা মূখ্য বিষয়। বাছাইকৃত বৈধ কোম্পানির প্রতিনিধির সামনে লটারির মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ হইলে কর্তৃপক্ষ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না। পরবর্তী ডিলার নিয়োগে সংশোধনী প্রয়োজন বলে তিনি লিখেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলসহ বিএনপির কয়েক নেতাকর্মী জানান,দলের সিনিয়র নেতারা এমনটা করবেন ভাবতেও পারিনি। তাদের উচিত ছিল ছোট ছোট ভাইদেরকে ডিলারশীপ পেতে সুযোগ করে দেওয়া। তা না করে লোভের বশবর্তী হয়ে নিজেরাই তাদের নামে নিয়ে নিয়েছেন।
তারা আরো জানান, দল এখনো খাদের কিনারে। কিভাবে দলকে দলের কর্মকান্ডকে শক্তিশালী করা যায় সেদিকে নজর না দিয়ে তারা আছেন ডিলার নিয়ে ব্যস্ত। এগুলো ভবিষ্যতে দলের কর্মকান্ডের উপর বিরুপ প্রভাব পরবে।
এদিকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা গত ১০ সেপ্টেম্বর উপরোক্ত ৪ জন ডিলারকে শর্তসাপেক্ষে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। এদিকে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারদের তালিকা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সরবরাহ বন্টন ও বিপণন বিভাগ, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply