উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অপর এক সদস্যকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি ও বেপরোয়া আচরণ করেছেন কমিটির সদস্য ও বানিয়াচং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া। বুধবার (৩১জুলাই) অনুষ্ঠিত সভায় বানিয়াচং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল চ্যাটার্জিকে এই হুমকি প্রদানসহ তার সাথে বেপরোয়া আচরণ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সভায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষনিক মিমাংসা হলেও হিন্দু কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বুধবার (৩১জুলাই) উপজেলা হলরুমে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মো: মাহবুুবুর রহমান এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হবিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, বানিয়াচং থানার ওসি (তদন্ত) আবু হানিফ।
জানা যায়, সম্প্রতি বানিয়াচং মহারত্নপাড়া এসইএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন দেবকে উড়ো চিঠির মাধ্যমে টাকা চেয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক অঞ্জন দেব বানিয়াচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সাবেক অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দাশ সভায় উত্থাপন করলে এর বিরোধীতা করে ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া শিক্ষক অঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে মনগড়া উচ্চ-বাচ্য বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল চ্যাটার্জি ইউপি চেয়ারম্যান ধন মিয়ার কথাবার্তার প্রতিবাদ করেন।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান ধন মিয়া কাজল চ্যাটার্জিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়াসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে আসন ছেড়ে তাকে মারতে তেড়ে আসেন তিনি। চেয়ারম্যান ধন মিয়ার এই ঔদ্ধ্যত্যপুর্ণ আচরণে সভায় থাকা আইনশৃঙ্খলা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপস্থিত সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান ধন মিয়া প্রতিটা সভায়ই একটা না একটা ইস্যু নিয়ে কথা বলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন। তার সাথে তর্ক করলে বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ কটুক্তি করেন। সভায় কাউকে কথা বলতে দিতে চান না। রীতিমতো বাধার সৃষ্টি করেন চেয়ারম্যান ধন মিয়া।
এই বিষয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বাবু কাজল চ্যাটার্জির সাথে কথা হলে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা সভায় একটা উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু এই সভায় স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন তারা এই সময়ে মিটমাট করে দিয়েছেন। আপাতত বিষয়টা নিয়ে তাদের ডিঙিয়ে কোন কিছু আর করতে চাচ্ছিনা।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া জানান, আইনশৃঙ্খলা সভায় ৩ জন সাংবাদিক উপস্থিত থাকায় এটা নিয়ে কথা বলেছি। রেজুলেশনে ১ জন সাংবাদিক থাকার কথা সেখানে এর অধিক থাকায় আমি আমার বক্তব্য তোলে ধরেছি। যাতে আগামীতে ১ জন সাংবাদিক রেখে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তিনি আরো জানান, বিষয়টা আসলে তেমন না। একটুআধটু কথাবার্তা হয়েছে এর চেয়ে বেশি কিছু নাহ। আর এসব উচ্চ-বাচ্য কথাবার্তা প্রায়ই হয়। পরে মিটমাট করা হয়েছে। বিগত এমপি সাব থাকতেও এমনটা হয়েছে।
এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হবিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল জানান, সভায় নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়ার বিরুদ্ধে বিগত দিনে এলাকার সংঘর্ষের সময় বন্দুক দিয়ে গুলি করা,পাখী শিকার, নারী ইউপি মেম্বার-চৌকিদারকে পেঠানো, ঘুরতে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের নাজেহাল করাসহ অসংখ্য অভিযোগে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply