দীর্ঘদিন দেড় বছর কমিটি নেই বানিয়াচং উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের। এতে ঝিমিয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। অনেকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করেও দলীয় পরিচয় দিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে অনেক ছাত্রলীগ কর্মী দলীয় পরিচয় ছাড়াই ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। কার্যত ব্যানার-ফেস্টুনেই চলছে ছাত্রলীগের কার্যক্রম।
গত ৮/৭/২০২২ ইং তারিখে হবিগঞ্জ জেলা শাখার এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগ ও জনাব আলী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্তি করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মো: মোশাররফ হোসেন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান রবিন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা ও কলেজ কমিটিতে সভাপতি/সাধারণ পদে আগ্রহী পদ প্রত্যাশীদের পনের (১৫) কার্যদিবসের মধ্যে জেলা সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের নিকট স্বশরীরে হাজির হয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর সিভি জমা নেন জেলা ছাত্রলীগ। কিন্তু সিভি জমা নেওয়ার ১৮ মাস পেরিয়ে গেলে এখনও ঘোষণা হয়নি নতুন কমিটি। এরই মধ্যে তৎকালীন সভাপতি মোশাররফ হোসেন আরিফ বাপ্পি অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনার কারণে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি/সেক্রেটারি।
পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা ছাত্রলীগের সহভাপতি ডা: সাইফ-ই-রহমান তন্ময়কে বিগত ২০২৩ সালে ১৪ অক্টোবর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
বর্তমানে শুধু ব্যানার-ফেস্টুনেই টিকে আছে উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। উপজেলা/জনাব আলী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছে না, তেমনি এ সংগঠনে বাড়ছে অনুপ্রবেশ। এতে করে উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথও থমকে গেছে।
পাশাপাশি সাবেক কমিটির পদে থাকা নেতারাও হতাশ হয়ে অনেকেই এখন রাজনীতির হাল ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। কেউ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ পাড়ি দিয়েছেন প্রবাসে।
আর যে কয়েকজন এখনো সক্রিয় আছেন, তারাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ জেলা (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতির লোক আবার কেউ সেক্রেটারির লোক হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে জানান দিচ্ছেন। কমিটি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী শেখ ফরহাদ আহমেদ তুষার জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আছি। তবে এখনো কোনও পদ পাইনি। প্রকৃত ছাত্রদের হাতে যেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়। এতে ছাত্রলীগ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। আমি চাই দ্রুত কমিটি গঠন করা হোক।
অপর সভাপতি প্রার্থী আজহার উদ্দিন সুমন বলেন, নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। পাশাপাশি সমাজের অসহায়দের পাশে থেকে ছাত্রলীগের নিবেদিত একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ আমাকে মূল্যায়ন করবেন। অনেক কর্মী আশা নিয়ে বসে আছে। কমিটি করতে যেন বেশি সময় না নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাত্র শেষ হলো এখন যাতে দ্রুত কমিটি দেয়া যায় সেদিকে যেন নজর দেন জেলা সভাপতি /সেক্রেটারি।
এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এজেডএম উজ্জ্বলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কমিটি হোক এবং আমাদের প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের কার্যক্রম উপজেলা ও কলেজ পর্যায়ে পূর্বের মতো সচল হোক। অবিলম্বে কমিটি ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি ডা: সাইফ-ই-রহমান তন্ময়ের সাথে কথা হলে তিনি বানিয়াচং মিররকে জানান, আশা করছি শীঘ্রই আমরা বানিয়াচং উপজেলা ও জনাব আলী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দিয়ে দিব।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply