ছাত্রীকে ফরম পূরণের টাকা দেয়ার নাম করে তার সাথে অশালীন আচরণ ও কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বানিয়াচং উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারে বিরদ্ধে।
গত ২৫ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রী।
অভিযোগের কপি ঘেটে জানা যায়, ওই গ্রামের সাহাব মিয়ার কন্যা পারিবারিকভাবে দারিদ্র ও শারিরীক অসুস্থ্যতার কারণে বিগত ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। চলতি বছরের এসএসসি দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি।
পরবর্তীতে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন তিনি। ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসার পর চার বিষয়ে টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে জানান প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে শিক্ষকের কথা মতো চার বিষয়ে টেস্ট পরীক্ষাও দেয়। কয়েকদিন পর প্রধান শিক্ষক তাকে এসএসসির ফরম পূরণ করতে দেখা করার জন্য বলে দেন। কথা মতো দেখা করার পর এসএসসিতে ভালো ফল করতে হলে পরিবারের অনুমতি নিয়ে বানিয়াচংয়ে তার বাসায় তিন মাস থাকতে হবে এবং যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক। সেই সাথে শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদার খারাপ অঙ্গভঙ্গিও করেন।
এসব প্রস্তাবে ভুক্তভোগী ছাত্রী রাজি না হওয়ায় যারা একাধিক বিষয়ে খারাপ করেছে তাদেরকে ফরম পুরণ করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান শিক্ষকের এমন অনৈতিক প্রস্তাব শুনে উক্ত ছাত্রী হতভম্ব হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। শিক্ষকের এমন আচরণে উক্ত ছাত্রী কৌশলে শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারের সব কথা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণের কথা ছাত্রী তার পরিবারকেও তাৎক্ষণিক জানায়।
এসব বিষয় খতিয়ে দেখে এসএসসির ফরম পূরণ ও পরীক্ষা দিতে সুযোগ করে দেয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রী। অভিযোগের সাথে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদার ও ছাত্রীর ফোনালাপ এর রেকর্ড ও পরীক্ষা দিতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড জমা দেয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উসমান মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। তারা আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। তবে শুনেছি ইউএনও মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এখন তিনি যে ব্যবস্থা নেন সেটার ভিত্তিতে আমরা ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিব।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি। ভুক্তভোগী ছাত্রীকে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য বলেছি। শিক্ষক হয়ে এমন আচরণ কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। অতীতেও তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আছে। এ নিয়ে পত্রিকায় অনেকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অদৃশ্য কারনে সেগুলোর আলোর মুখ দেখেনি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এলাকায় দুটি গ্রুপ আছে। একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। ছাত্রীর সাথে আপনার কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে মর্মে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
বানিয়াচং মাধ্যমিক অফিসের একাডেমিক কর্মকর্তা সম্পদ বাবুর সাথে অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হল তিনি জানান, ইউএনও মহোদয় আবেদনটি আমাদের অফিসে পাঠালে আমরা তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষককে নোটিশ দিয়েছি। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সেই অভিযোগের শুনানী হবে।
বিস্তারিত জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি মাধ্যমিক কর্মকর্তা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।
প্রসঙ্গত, একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান চুকদারের বিরুদ্ধে “এমপিওভুক্ত পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা আত্নসাত,কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ও নানা অনিয়ম নিয়ে গত ৬ এপ্রিল ২০২৩ দৈনিক আমার হবিগঞ্জ, সমকালসহ স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply