বানিয়াচং উপজেলার শরীফখানী গ্রামের নাজমুল আলম(নাজিম) পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
মানুষের পরিশ্রম যে কখনোই বিফলে যায় না তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো নাজমুল।হারার পূর্বে হার না মানা স্বভাবের জন্য ছোট থেকেই নাজমুল ছিলো অত্যন্ত পরিশ্রমী মেধাবী একজন ছাত্র।
তাই তো গতবছর সাব ইনস্পেক্টর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত গিয়েও চাকুরী না হওয়ার পর হতাশ না হয়ে নিজের ভেতরে আরও জিদ এনে এবছরে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাস ও পরিশ্রমের মূল্য পেয়েছে নাজমুল ।
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া নাজমুল ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতো এবং পরিবারেও আর্থিক সাপোর্ট দিতো। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাজমুল ছিলো মেঝো। বড় ভাই নাসির কোরআনে হাফিজ এবং টেইলারিং করে সংসার চালাতো। ছোটভাই সজীব হোসেন পড়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এইসএসসি পরীক্ষা শেষ করতে না করতেই বাবাকেও হারায় নাজমুল। তারপর আবারও জীবন যুদ্ধে প্রচন্ড ধাক্কা খায় তার পরিবার। সে নিজেও কিভাবে নিজের পড়াশোনা,সংসারের খরচ ও ছোটভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালাবে সে বিষয়ে চিন্তায় পড়ে যায়! তবে এক্ষেত্রে ভেঙ্গে না পড়ে নিজ পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি পড়ানোতে মনযোগী হয়।
এভাবে অনার্স পর্যন্ত শেষ করে এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছুদিন এবং মরারত্ন পাড়া স্কুলে বছর দুয়েক অস্থায়ী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে সংসারে বড় ভাইকে ও মাকে সাপোর্ট দিতে চেষ্টা করে।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ছিলো নাজিমের প্রচন্ড টান। পড়াশোনা ও টিউশনির জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় খেলা ক্রিকেট খুব বেশিদিন খেলতে না পাড়লেও ব্যাডমিন্টন খেলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন খেলোয়াড় ছিল সে।
বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন প্রান্তরে ব্যাডমিল্টন টুর্নামেন্টে একক ও জুটি গড়ে অংশগ্রহণ করতো। নিজের শারীরিক ফিটনেস ঠিক রাখতে প্রচ্ড পরিশ্রম করতো সে। এমনও হয়েছে চাকুরীর আবেদন করার পর নিজের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে প্রতিদিন ভোরবেলা শরীফখানী পশ্চিম ঈদগাহ মাঠে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন চালিয়ে যেতো।
তারপর নাজমুল হাসান জাহেদ একাডেমি হওয়ার পর সেখানে অত্যন্ত কঠিন নিয়মের ভিতরে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ পায় নাজমুল।
ব্র্যাকের সমস্ত সৃজনশীল আধুনিক কারিকুলামে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় নাজমুল। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক,কলিগদের থেকে শুরু করে আশেপাশের সকলের মুখেই শিক্ষক নাজমুল আলমের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এর ভিতরেই অক্টোবরের শেষের দিকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির খবরটি পায় সে। পরিবার,সহকর্মী থেকে শুরু করে এলাকার ছোট-বড় সকলকে তার এসআই পদে চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশের কথা জানায়। এর পরেই পুরো বানিয়াচংয়ের তরুণদের ফেইসবুক ওয়ালে নাজমুলের প্রতি শুভেচ্ছা জানানো পোস্টে ভরে যায়।
নাজমুলকে তার প্রতিষ্ঠান, সহপাঠী, সহকর্মী, ছাত্ররা এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে সম্মাননা জানিয়েছে। সংবর্ধনা দিয়েছে তার নিজ এলাকা শরীফখানী মহল্লার জুরাসিক ক্রিকেট ক্লাব।
এই জুরাসিক ক্লাবের প্রাক্তন খেলোয়াড়ও নাজমুল। সেজন্য নাজমুলকে তার এলাকার তরুণরা অত্যন্ত ভালোবাসার সাথে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। নাজমুল নিজেও জুরাসিক ক্লাবের সাথে কাটানো সময়কে স্মরণ করেছে।
বানিয়াচং মিররের প্রতিনিধি নাজমুলের সাথে কথা বলায় জানতে পেরেছেন, চাকুরীর খবরে সকলের আগে সে স্মরণ করেছে তার প্রয়াত বাবাকে এবং মা কে। সে এটিও জানিয়েছে বাবা মারা যাওয়ার পর জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তার মায়ের অনুমতি নিয়েই নিয়েছে এবং তার মাকে যে এতো বড় খুশি উপহার দিতে পেরেছে এটিই তার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া।
সিলেট থেকে পুলিশের একটি টীমের মাধ্যমে সড়ক পথে সারদা পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে নাজমুলআলমসহ সিলেট বিভাগের অন্যান্য নিয়োগপ্রাপ্তরা। নাজমুল বানিয়াচংয়ের সকলের নিকট সে দোয়া প্রার্থী।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply