টাকা ছাড়া প্রবেশপত্র না দেয়া, পরবর্তীতে অঙ্গীকারনামায় পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর রেখে প্রবেশপত্র দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় অবশেষে বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়াকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত ৬ মে বুধবার গভর্নিং বডির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন সভাপতি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহসহ অপর সদস্যরা। তার আগে গত গভর্নিং বডির সভায় অধ্যক্ষর উপর অভিযোগ গুলোর সঠিক ব্যাখ্যার জবাব জানতে চেয়ে ১ সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় কমিটি।
পরবর্তীতে তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়া তাকে অপসারণ করা হবে মর্মে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গভর্নিং বডির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ। তবে সরাসরি থাকে বহিষ্কার না করে নিজ থেকে চলে যেতে ৪ মাসের সময় বেধে দেয়া হয়।
এই ৪ মাসের মধ্যে তিনি নিজের ইচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারিত হয়ে চলে যাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় গভর্নিংবডি। পাশাপাশি তার কাছ থেকে অফিসের সকল দায়িত্ব উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এই খবর শুনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কলেজ কর্তৃপক্ষ, গভর্নিংবডির সদস্য ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে স্বস্থির নি:শ্বাস নেমে এসেছে।
সুত্র জানায়, সুলতান আহমেদ ভুইয়া অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে কলেজের পরিবেশ। বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজে যেখানে ওই অধ্যক্ষ আসার আগে অনার্সের ফরম পুরণ ফি ছিল ৩ হজার ১শ টাকা তারপর তিনি নিয়েছেন হচ্ছে ৪ হাজার ৭শ টাকা করে।
অনার্সের সকল শিক্ষার্থীদের সেমিনার লাইব্রেরীর জন্য গত বছরে ১ হাজার ৫শ টাকা করে আদায় করায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়া। বিষয়টি নিয়ে একটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকের কাছে প্রতিবাদ জানালে কেউ কর্ণপাত করেননি।
এইচএসসি’র রেজি: ফি যেখানে অন্যান্য কলেজে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৮শ টাকা সেখানে ওই কলেজ অধ্যক্ষ নিয়েছেন ৩ হাজার ৫শ টাকা করে। এ সকল সিদ্ধান্ত তিনি গভর্নিং বডির সাথে কথা না বলে বা তাদেরকে না জানিয়ে এককভাবেই নিয়েছেন অধ্যক্ষ সুলতান ভুইয়া।
এসব অভিযোগগুলো খতিয়ে দেয়ার জন্য কলেজ ছাত্রীর অভিভাবক বানিয়াচং ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের মৃত জামান উল্লাহর পুত্র মোতাব্বির হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। এতো গেল কলেজের আভ্যন্তরীন বিষয়ে অনিয়ম। এবার দেখুন এই অধ্যক্ষ তার ব্যক্তিগত কাজ দেখিয়ে নানা অজুহাতে কিভাবে কলেজ ফান্ড থেকে টাকা আদায় করে নিয়েছিলেন।
ছবি : নতুন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন সুলতান আহমেদ ভুইয়া। তার ফেসবুক থেকে নেয়া।
কলেজের কোন কাজে জেলা প্রশাসক বা ওই অফিসে গেলে তার এই আসা-যাওয়ার বিল ভাউচার করে অফিস থেকে টাকা নিতেন। ব্যক্তিগত কাজে গেলেও তিনি অফিসের খাতে ভাউচার দিয়ে টাকা নেন তিনি। এমনকি কলেজে আসা-যাওয়ার গাড়ি ভাড়াটাও তিনি বিল করে কলেজ ফান্ড থেকে নেন বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে।
তাছাড়া বিগত ৬ মাসে বিভিন্ন জায়গা আসা-যাওয়া খরচ বাবদ তার টিএডিএ’র বিল দেখিয়ে কলেজ ফান্ড থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে খরচ করে ফেলেন অপসারণকৃত অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়া। এগুলো নিয়ে কলেজের আভ্যন্তরীন অডিটে এসবের সত্যতা মিলেছে।
ছবি : দায়িত্ব নেয়ার পর কলেজ শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের নিয়ে নতুন অধ্যক্ষ’র ফটোসেশন ।
এই অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে কলেজ ফাউন্ডার, গভর্নিংবডির সভাপতি, কলেজ শিক্ষক ও স্টাফদে সাথে অসদাচরণসহ অসংখ্য অভিযোগ বিদ্যমান ছিল।
কলেজ অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়ার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গেল বছরের ৪ নভেম্বর “বানিয়াচংয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়-অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর রেখে প্রবেশপত্র দিলেন অধ্যক্ষ”, ৫ নভেম্বর “সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে যত অভিযোগ” ৭ নভেম্বর “বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজে ৬ টাকার উপবৃত্তির ফরম ৫০টাকায় বিক্রি” ও ৮ নভেম্বর “সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের” ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সমকাল ও আমার হবিগঞ্জে সিরিজ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে গভর্নিং বডি। অবশেষে দীর্ঘ তদন্ত’র পর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পান তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ। যার ফলে তাকে কলেজ অধ্যক্ষ’র পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, সুলতান আহমেদ ভুইয়া বিবাড়িয়া জেলার বাঞ্জারামপুর উপজেলার তাজুল ইসলাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেছেন। এই যোগদানের ছবি বিদায়ী অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ ভুইয়া তার নিজের ফেসবুকে ওয়ালে পোস্ট করেছেন।
অন্যদিকে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়ার আগপর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারি অধ্যক্ষ সালামত আলী খান। বিষয়টি দৈনিক আমার হবিগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ইকবাল হোসেন খান।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply